রসুনের গুনাগুনঃ রসুন আয়ুর্বেদে শত রোগের মহৌষধ। প্রাচীন আচার্যরা রসুনকে অমৃত্যের সমান বলেছেন। শরীরের সপ্ত ধাতুকে পুষ্ট করে বলে রসুনকে রসায়ন বলে।
রসুনের নামকরনঃ মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে সূরায়ে বাকারার ৬১ সং আয়াতে রসুনের কথা উল্লেখ করেছেন। রসুনের মূলে কটু, পাতায় তিক্ত, ডাটায় কষারু,ডাটার ডগায় লবন, আর কলিতে মধুর রস রয়েছে। ৬ টি রসের ৫ টি রস আছে শুধু অম্ল রস নেই। এ কারনে সংস্কৃতিতে রস+উন = রসুন বলা হয়। উন অর্থ কম। অর্থাৎ একটি রস নেই।
রসুনে উপাদানঃ রসুনে ৬০% পানি, ২০% কার্বহাইড্রেট, ৬% প্রোটিন সমৃদ্ধ। রসুনে এছাড়াও ভিটামিন এ এবং সি পাওয়া যায়। রসুনে সামান্য লবন, ইস্পাত ও তামা মিশ্রিত রয়েছে। রসুনের শূলে হলো একটি সুগন্ধি তৈল যা ১%-৫% পর্যন্ত। উক্ত তৈলে বিশেষ ২ টি রত্ন সমতুল্য উপাদান রয়েছে। অনেক রোগের চিকিৎসায় রসুনের চেয়ে উত্তম আর কোন ঔষধ নেই।
রসুনের উপকারিতাঃ রসুন উষ্ণ, তীক্ষ্ণ, হজমী কারক, পুষ্টিকারক, বীর্যবর্ধক দূষিত মলমূত্র নিস্কারক, রোগ প্রতিরোধক নিরাময়ক রসায়ন হিসেবে কাজ করে। রসুনে বমি, বদহজম, আমযুক্ত মল, কৃমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বায়ু, অরুচি, কফ, হাঁপানি, অর্শ, গুল, ব্যথা, জ্বর, হার্ট প্রেসার, গ্যাস্ট্রিক আলসার প্যারালাইসিস ইত্যাদি রোগে খুবই উপকারী।
মাথা ব্যথায় রসুনঃ রসুন এর ঘ্রান নিলে মাথা ব্যথা কমে যায়। রসুন পিষে রস লাগালে আধকপালি মাথাব্যথা কমে যায়।
শুকনো সর্দিতে রসুনঃ দুই থেকে তিন ফোঁটা রসুনের রস নাকে নিলে এই রোগ কমে যায়।
উঁকুনে রসুনঃ যাদের মাথায় উঁকুন হয়েছে, তাদের মাথায় রসুনের রস মাথায় মালিশ করলে উকুন মরে যায়। রোজ একবার করে তিনদিন।
কান পাকায় রসুনঃ দুই থেকে তিন কোয়া রসুন ছেঁচে সরিষার তেলের সাথে গরম করে কানে দিলে কান পাকা ভালো হয়। রোজ একবার করে তিনদিন।
ব্রনে রসুনঃ রসুন বেটে ব্রনে প্রলেপ দিলে ব্রন আর বৃদ্ধি হয় না। নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রন কমে যায়। রোজ ২ বার করে ৭ দিন।
গলা বসায় রসুনঃ সামান্য রসুন এবং যষ্ঠি মধু একত্রে চুষে খেলে গলা বসা কমে যায়। রোজ তিন বার করে ৭ দিন। ৫/৭ কোয়া রসুন পিসে পানির সাথে গরম করে গড়গড়া করলে গলা পরিস্কার হয়। গলার স্বর ভাল হয়। ৫/৭ কোয়া রসুন ছেচে পানিতে জ্বাল দিবে এবং এই পানির বাষ্প মুখ দিয়ে টানলে গলা ব্যথা, গলা ফুলা, গলা বসা কমে যায়।
সর্দিতে রসুনঃ রসুন পুড়ে ঘ্রান নিলে সর্দি কমে যায়। সামান্য রসুন, ত্রফলা (হরিতকী, বয়রা ও আমলকীর গুড়া একত্রে) মিশিয়ে খেলে সর্দি কমে যায়। রোজ ৩ বার করে তিন দিন।
কাশিতে রসুনঃ ১ চামচ রসুনের রস, ১ চামচ তুলসী পাতার রস, আধা চামচ করে আদার গুড়া ও গোল মরিচের গুড়া, ১ কাপ দুধে মিশিয়ে খেলে কাশি কমে যায়। এটা সর্দিরও মহৌষধ। রোজ ২ বার করে দিন।
গলগন্ড রোগে রসুনঃ রসুন পিষে মলমের মত করে সামান্য গরম করে কাপড়ে লাগিয়ে ব্যান্ডেজের মতো করে গলগন্ডের উপর বেধে রাখলে গলগন্ড কমে যায়। তিন দিন।
দাঁতের ব্যাথায় রসুনঃ রসুন পিষে দাঁতের গোড়ায় লাগালে দাঁতের ব্যাথা কমে। ১ চা চামচ রসুনের রস, সমপরিমান আদার রস এবং সামান্য সৈন্ধব লবন গরম পানিতে মিশিয়ে খাবে। রোজ ২ বার করে ১০ থেকে ১৫ দিন।
দাঁতের পোকায় রসুনঃ রসুন বেটে পোকায় খাওয়া দাঁতের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখলে পোকা মারা যায়।
দাঁতের পোকা উঠানোর নিয়মঃ ৭/৮ কোয়া রসুন একটি বাটুলী গাছের পূর্ন শিকড় সামান্য ছেচে নিয়ে ১০৮ গাছা দুর্বা একত্রে হাতে নিয়ে রোগীর মুখের সামনে দুই হাতে ডলিতে হবে। রোগীর মুখ নিচু করে নিবেন। নিচে কলা পাতা রাখবেন। শনি বা মঙ্গলবার ভোরে ঘুম থেকে উঠিবার পর পর উঠাতে হবে।
জিহ্বায় ঘা-এ ঘসুনঃ রসুন বেটে গাওয়া ঘি বা সরিসার তৈল ভেজে জিহ্বা দিয়া চাটিয়া খেলে আরোগ্য হয়। রোজ ২ বার করে তিন দিন।
হুপিং কাশিতে রসুনঃ ৩/৪ টি করে রসুনের কোয়া দুধে ফুটিয়ে সে দুধ বাচ্চাদের খাওয়াইলে হুপিং কাঁশি কমে যায়। রোজ ৩ বার করে ৫ দিন।
লো প্রেসারে রসুনঃ ৮/১০ কোয়া রসুন পিষে পানিতে সিদ্ধ করে পানি সিদ্ধ করে পানি পান করলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়, শক্তি বৃদ্ধি হয়। রক্ত শূন্যতা দূর হয়। মাংশপেশী শক্তিশালী হয়। বাত বা ঠান্ডা জনিত রোগ দূর হয়। রোজ ২ বার করে ১৫ দিন।
হাই প্রেসারে রসুনঃ ১ চামচ রসুন পিষে তাহার সাথে সামান্য জিরা, ধনিয়া, গোল মরিচ, সৈন্ধব লবন এর গুড়া এবং পুদিনা পাতা মিশিয়ে চাটনি তৈরি করে খেলে হাই প্রেসার আরোগ্য হয়। রোজ ২ বার করে ১৫ দিন।
অজীর্নে রসুনঃ নিয়মিত রসুন খেলে এই রোগ আরোগ্য হয়। ২ চামচ করে রসুন, জিরা, সৈন্ধব লবন, হিং, গন্ধব, শুকনো আদা, গোলমরিচ, পিপুল চূর্ন করে কাগজি লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে ছোলা বুটের ন্যায় ছোট বড়ি তৈরি করে নিতে হবে। রোজ ২ টা করে ৭ দিন খাবে। এতে পেট ফাঁপা, বায়ু রোগও সারে।
ঘা- এ রসুনঃ রসুন পিষে নিয়মিত তিন দিন ঘা- এ লাগালে ঘা এর পোকা/জীবানু মারা যায়।
ওতরায় রসুনঃ রসুনের রস ওতরায় লাগালে ওতরা (শরীরে লাল লাল চাকা) মিলিয়ে যায়।
পাঁচড়ায় রসুনঃ রসুন পিষে পাঁচড়ায় প্রলেপ দিতে উপরের পাপড়ি নরম হয়ে ঝড়ে যায়।
ফোঁড়ায় রসুনঃ রসুন ও গোল মরিচ একত্রে পিষে ফোঁরায় লাগালে ফোঁড়া পেকে ফেটে যায়।
শ্বেত বা ধবল রোগে রসুনঃ রসুন পিষে নিশাদল এর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে এই রোগ কমে যায়। রোজ ২ বার করে ১৫ দিন।
ব্যাথায় রসুনঃ ব্যাথাযুক্ত স্থানে রসুন পিষে সামান্য গরম করে প্রলেপ দিলে ব্যাথা কমে যায়।
ভাঙ্গা- মচকায় রসুনঃ রসুন পিষে সামান্য গরম করে প্রলেপ দিলে মচকা ব্যাথা সারে এবং ভাঙ্গায় জোড়া লাগে। রসুন ও গুড় এক সঙ্গে পিষে প্রলেপ দিলে শরীরের আঘাত আরোগ্য হয়।
জ্বরে রসুনঃ রসুনের চাটনি খেলে জ্বর আরোগ্য হয়। ১ চামচ করে রোজ ২ বার নিয়মিত ২ দিন। রসুনের রস ২ চামচ, গাওয়া ঘি ১ চামচ মিশিয়ে খেলে জ্বর কমে যায়। রোজ ৩ বার করে ৩ দিন। মহিষের দুধে ৪/৫ কোয়া রসুন জালিয়ে খেলে জ্বর কমে যায়। রোজ ৩ বার করে ৩ দিন।
যক্ষায় রসুনঃ রসুনের চাটনি নিয়মিত খেলে যক্ষা রোগীর উপকার হয়। রোজ ২ বার করে ৩০ দিন।
রসুনের চাটনিঃ ২৫০ গ্রাম রসুন এবং চিনি, সৈন্ধব লবন সমপরিমান একত্রে পিষে দ্বিগুন ঘি মিশিয়ে চাটনি তৈরি করতে হবে।
রসুনের হালুয়াঃ ২৫০ গ্রাম রসুন, ২৫০ গ্রাম তালমিস্রি, ১ কেজি দুধ একত্রে হালকা আগুনে জালিয়ে হালুয়া তৈরি করতে হয়। সামান্য এলাচি ও দারচিনি দিলে ভাল হয়।
শরীর দুর্বলতায় রসুনঃ ১ চামচ করে রসুনের হালুয়া রোজ ২ বার খাবে ১৫ দিন। এভাবে খেলে শরীরের দুর্বলতা কমে যায়। রক্ত শূন্যতা দূর হয়। স্বাস্থ্য ভাল হয়।
0 Comments